আজ ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চসিক মেয়র কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের এক গুচ্ছ দাবি

চসিক মেয়র কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের এক গুচ্ছ দাবি


বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা এক গুচ্ছ দাবি নিয়ে চসিকের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে

নগরজুড়ে খেলার মাঠের সুবিধা বাড়ানো, বিপ্লব উদ্যানকে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণ থেকে রক্ষা করে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যেসব নালা উন্মুক্ত সেগুলোর ওপর স্ল্যাব নিশ্চিত করাসহ একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

দাবির মধ্যে ছিল- নগরের ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো সংস্কার করা, চাঁদাবাজি-দখলবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, আগ্রাবাদ মোড়ে অবৈধ হকার উচ্ছেদ করা, গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, চট্টগ্রামের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের যে ১১ জন শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে এসব দাবি জানানো হয়।

মেয়র ছাড়াও সভায় চসিকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রতিনিধিরা।

ছাত্ররা চট্টগ্রামকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে মেয়রকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

মেয়র বলেন, আমি আপনাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। আপনারা যেসব দাবি জানাচ্ছেন সেগুলোর অধিকাংশ আমি শপথের পরপরই চট্টগ্রামে আসার পর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে পাহাড়তলীর শেখ রাসেল শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছি।

আমার ইচ্ছা ৪১টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ গড়ে তুলব। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অসচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। শিশুদের খেলার মাঠে ফেরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে। এ ছাড়া আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, জিয়া শিশুপার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি তোমাদের বিপ্লব উদ্যানে গেছি, সেখানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল সেটি ভেঙে দিয়েছি। আমি সরাসরি বলে দিয়েছি যে বিপ্লব উদ্যানে গ্রিন পার্ক হবে এবং সেখানে বিপ্লব উদ্যানের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা সেটি সম্পর্কে কিছু স্মৃতিফলক থাকবে।

মেয়র শাহাদাত আরো বলেন,

আগস্ট মাসে যে গণহত্যা হয়েছে, সে গণহত্যায় শহীদদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। আন্দোলন চলাকালে আহতদের আমি আমার দুইটা হসপিটাল ট্রিটমেন্ট এবং হলি হেলথ হসপিটালে চিকিৎসা দিয়েছি। ৫ আগস্টের পরে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আমি নিজে গেছি আহতদের দেখতে। চোখের সমস্যা, গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে।

সিটি গভর্নমেন্ট প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, নগর সরকার নেই চট্টগ্রামে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। আমি একা কথা বলছি। নগর সরকার ছাড়া পরিকল্পিত উন্নয়ন শুধু চট্টগ্রামে না সারা বাংলাদেশে অসম্ভব। সব সেবা সংস্থা যদি সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ না করে তাহলে কখনো পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব না। জলাবদ্ধতার প্রকল্প নিয়েও বৈষম্য হয়েছে। যে প্রকল্প চসিক করার কথা সেটা করছে সিডিএ। এখন এ প্রকল্প শেষ হলে হ্যান্ডওভার করবে চসিককে। কিন্তু এ প্রকল্প কীভাবে সচল রাখা যায়, কীভাবে এগুলোর ব্যয় নির্বাহ হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজের তদারকিতে ছাত্রদের সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, ছাত্ররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের যে কার্যক্রম চলছে তা ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে পারে। ডেঙ্গু ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করতে পারে ছাত্ররা। এ ছাড়া স্থানীয় যে কোনো সমস্যা আমাকে জানালে আমি সমাধানের উদ্যোগ নেব।

মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত একটা নিরাপদ শহর তৈরি করতে চাই যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একটা নিরাপদ শহরে থাকতে পারি। এই কনসেপ্টের জন্য তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি চাই যেখানে সন্ত্রাস হবে, চাঁদাবাজি হবে, যে করুক তোমরা সেখানে দাঁড়িয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমাকে যদি তোমরা বল সেখানে আমি এসে তোমাদের সাথে সার্বিক সহযোগিতা করব।

চসিককে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে নেওয়া উদ্যোগ সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমি বন্দর থেকে ১ শতাংশ হিস্যা পেতে কাজ করছি। এছাড়া, বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো থেকে কর আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করছি। চসিককে ঠকিয়ে চসিকের যেসব ভূমি ও স্থাপনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিল করব। চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

অনলাইন ডেস্ক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর